জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শহীদ রফিক-জব্বার হলের ছাদ থেকে পড়ে গতকাল মঙ্গলবার অমিত কুমার বিশ্বাস নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর পর্বের ৪৫তম ব্যাচের (২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ) শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর কক্ষে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া গেছে।
অমিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ রফিক-জব্বার হলের রফিক ব্লকের ৩১৫ নম্বর কক্ষে থাকতেন। এ কক্ষে মোট চারজন থাকতেন তাঁরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে তাঁর রুমমেটরা কক্ষে যান। তাঁরা অমিতের বিছানার বালিশের নিচে একটি চিরকুট পান। চিরকুটে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মস্তিষ্কই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী।’
এ বিষয়ে ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে চিরকুটের লেখার সঙ্গে তাঁর আগের খাতার লেখার মিল পাওয়া গেছে। আমরা আপাতত কক্ষ বন্ধ করে রেখেছি। পুলিশ বাকিটুকু দেখবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, অমিতের কক্ষে পাওয়া চিরকুটটি তাঁর বাবা অজয় কুমার বিশ্বাসকে দেখানো হয়েছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, এটি অমিতেরই হাতে লেখা।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাঁর রুমমেটরা এসে বালিশের নিচে সুইসাইড নোট পান। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁর রুম পরিদর্শন করে প্রাথমিকভাবে নোটের বিষয়টি নিশ্চিত করেন হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। সুইসাইড নোটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমার মস্তিষ্কই আমার মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমি নিজেই নিজের শত্রু হয়ে পড়েছি অজান্তেই। নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত। আর না। এবার মুক্তি চাই। প্রিয় মা, বাবা, ছোট বোন সবাই পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ’
এ ছাড়া অমিতের পড়ার টেবিলে আরো কয়েকটি সুইসাইডবিষয়ক লেখা পাওয়া গেছে। হলের প্রাধ্যক্ষ সোহেল আহমেদ বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে নোটের লেখার সঙ্গে অমিতের খাতার লেখার মিল রয়েছে। রুমের পড়ার টেবিলে সুইসাইডবিষয়ক আরো লেখা রয়েছে। আমরা আপাতত রুম বন্ধ করে রেখেছি। পুলিশ এসে বাকিটুকু দেখবে। ’
অমিতের একজন সহপাঠী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গত বছর থেকে অমিত বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নানা ধর্মের বিষয় সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তাঁর। ধর্ম নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগতেন তিনি।
উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নুহু আলম বলেন, ‘অমিত খুবই ভদ্র একজন ছাত্র ছিলেন। সন্তানতুল্য ছাত্রের এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া যায় না। তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত কারণটি উদ্ঘাটন করতে হবে এবং এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তির যেন না হয়।’
গতকাল মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে হলের পাঁচ তলার ছাদ থেকে পড়ে যান অমিত কুমার বিশ্বাস। তাঁকে তাৎক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অমিতের মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী শাহরিয়ার খান হূদয় বলেন, ‘আমি তিনতলায় থাকা অবস্থায় ছাদ থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ শুনি। পরে ঘটনাস্থলে অমিতকে পড়ে থাকতে দেখে হলের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সহায়তায় উদ্ধার করি। ছাদে অমিতের সঙ্গে অন্য কেউ ছিল কি না, তা নিশ্চিত নই। ’